বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৩ অপরাহ্ন
বিডিনিউজ : নিজের নামের একাংশ এবং স্বামীর নামের মিলের কারণে প্রায় সাড়ে ১৬ মাস জেল খাটা এক নারীর মুক্তির আদেশ দিয়েছে চট্টগ্রামের একটি আদালত।
চট্টগ্রামের পঞ্চম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক শরীফুল আলম ভুঁঞা মঙ্গলবার দুপুরে টেকনাফের হাসিনা বেগম নামের ওই নারীকে মুক্তির আদেশ দেন।
হাসিনা বেগমের আইনজীবী গোলাম মওলা মুরাদ বলেন, পুলিশ ও কারাগারের প্রতিবেদন যাচাই শেষে আদালত অন্যের সাজা ভোগ করা হাসিনা বেগমকে মুক্তির নির্দেশ দেন।
ওই আদালতের বেঞ্চ সহকারী ওমর ফুয়াদ বলেন, আদেশে পুলিশকে প্রকৃত আসামি গ্রেপ্তার করতে নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।
ইয়াবা বহনের মাদক মামলায় দণ্ডিত হাসিনা আক্তারের বদলে টেকনাফ থানা পুলিশ ৪০ বছর বয়সী হাসিনা বেগমকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে গ্রেপ্তার করেছিল। দুই নারীর স্বামীর নামই হামিদ হোসেন।
পরে টেকনাফ থানার পুলিশের প্রতিবেদন এবং চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের রেজিস্ট্রার যাচাই করে দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয় সাজা ভোগকারী নারী ‘প্রকৃত আসামি নন’।
এসব প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করা হলে মঙ্গলবার বিচারক ভুক্তভোগী নির্দোষ ওই নারীকে মুক্তির আদেশ দেন।
২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে কারাগারে থাকা হাসিনা বেগম কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইসমাইল হাজি বাড়ির হামিদ হোসেনের স্ত্রী। তিনি টেকনাফ পৌর সদরে একটি পানের দোকান চালাতেন।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের যে মামলায় হাসিনা বেগম জেল খাটছেন সেই মামলার প্রকৃত আসামি টেকনাফ পৌর সদরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের চৌধুরী বাড়ির হাসিনা আক্তার (২৭), তার স্বামীর নামও হামিদ হোসেন।
নগরীর কর্ণফুলী থানার মইজ্জ্যার টেক এলাকায় দুই হাজার ইয়াবাসহ পুলিশের হাতে ২০১৭ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার হন হাসিনা আক্তার ও তার স্বামী হামিদ হোসেন।
পরে ওই বছরের ২৭ নভেম্বর তারা জামিনে মুক্তি পেয়ে পলাতক হন। ওই ঘটনায় পুলিশের করা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় তাদের অনুপস্থিতিতে ২০১৯ সালের ১ জুলাই চট্টগ্রামের পঞ্চম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ দুই আসামিকে পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড দেন।
সেই সাজা পরোয়ানা টেকনাফ থানায় পৌঁছালে ২০১৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর হাসিনা বেগমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
হাসিনা বেগম গ্রেপ্তারের পর থেকে তার দিনমজুর স্বামী হামিদ হোসেন এলাকা ছাড়েন। এই দম্পতির দুই মেয়ে এখন থাকেন নানুর বাড়িতে। বড় ছেলে শামীম নেওয়াজ চট্টগ্রাম নগরীতে একটি বাসায় কাজ করছেন।
শামীম নেওয়াজের কাছ থেকে তার মায়ের বিনাদোষে সাজা ভোগের বিষয়টি জানতে পারেন আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ।
তিনি বলেন, “আগেও পরিবারের পক্ষ থেকে একবার বিষয়টি নিয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু কিশোর ছেলের পক্ষে এর বেশি কিছু করা সম্ভব হয়নি। তখন কোনো আদেশও হয়নি। ২২ মার্চ আমি আবার আবেদন করি।
“তখন আদালত টেকনাফ থানার পুলিশকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলে। গত বৃহস্পতিবার তারা প্রতিবেদন দিয়ে জানায়, প্রকৃত আসামি হাসিনা আক্তারের বদলে জেলে আছে হাসিনা বেগম। তাদের স্বামীর নাম এক তবে অন্য তথ্যে পার্থক্য আছে। সেদিন হাসিনা বেগমের জামিনের আবেদন করি আদালতে।”
এরপর আদালত চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপারকে ২০১৭ ও ২০১৯ সালের রেজিস্ট্রার যাচাই করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেন।
মঙ্গলবার আদালত থেকে সেই প্রতিবেদন জমা দিয়ে জানানো হয়, ২০১৭ সালের হাসিনা আক্তার এবং ২০১৯ সালের কারাগারে আসা হাসিনা বেগম এক ব্যক্তি নন।
পুলিশের ভুলে হাসিনা বেগম সাজা ভোগ করায় এ বিষয়ে আদালতের লিখিত আদেশ পাওয়ার পর পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানান আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ।
তিনি বলেন, “আদেশে কি আছে তা দেখে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনে আবার আবেদন করব। পাশাপাশি হাসিনা বেগমের ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েও আবেদন করা হবে।”
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply